জানা যায়, ২০১৪ সালে ২০১৪-১৫ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পাস কোর্সে ভর্তি হন সাত কলেজের এসব শিক্ষার্থী। প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয়।
২০১৭-১৮ সেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী চললেও পুরাতন সেশনের শিক্ষার্থীদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ীই পাঠদান চলছে। একইসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন্স অনুযায়ীই তাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।সাত কলেজের ওয়েবসাইটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলেশন্স দেয়া আছে।
সর্বশেষ ২০১৩-১৪ সেশন থেকে নতুন সিলেবাস কার্যকর করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক পাস ডিগ্রীর রেগুলেশন্স অনুযায়ী, চার ক্রেডিট কোর্সের জন্য পরীক্ষার সময়কাল থাকে ৪ ঘণ্টা। আর ইংরেজি বিষয়ের ক্রেডিটও চার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী, ইংরেজীতে ২০ নম্বরের ইনকোর্স আর বাকি ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ সেশনের স্নাতক পাস তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৮০ নম্বরের এ লিখিত পরীক্ষার জন্য সময় ছিল সাড়ে ৩ ঘণ্টা। এছাড়া ২০ নম্বরের ইনকোর্স পরীক্ষার জন্য আলাদা সময় দেয়া হয়।
একই সেশনের সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ অক্টোবর। এদিন ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১০০ নম্বরের এ পরীক্ষার জন্য সময় দেয়া হয় ৩ ঘণ্টা। যা সিলেবাস বা রেগুলেশন্স-এ দেয়া সময়ের ১ ঘণ্টা কম। এ নিয়ে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা।
শাহিন হোসেন নামের একজন পরীক্ষার্থী বিডি২৪লাইভকে বলেন, এক বছর আগেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়ে গেছে। তাদের ফলাফলও অনেক আগে ঘোষণা হয়েছে। অথচ আমরা এক বছর পর পরীক্ষা দিতে গিয়েও বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।
তিনি বলেন, যেখানে আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার জন্য সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় পেয়েছে সেখানে আমাদের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় আরও আধা ঘণ্টা সময় কম দেয়া হয়েছে। সময় কম দেয়ায় আমরা ঠিকমত লিখতেও পারিনি। তাই অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।
মাহবুব ইসলাম নামের আরেকজন পরীক্ষার্থী বলেন, সময় কম দেয়ার কারণে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারিনি। তাই পরীক্ষাও ভাল হয়নি। যেখানে ৮০ নম্বরের জন্য সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় দেয়া হয় সেখানে ১০০ নম্বরের জন্য তিন ঘণ্টা সময় দিলেতো সব উত্তর লেখা যায় না। সময় আরও বাড়িয়ে দিলে সব উত্তর লিখতে পারতাম।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্চুক কবি নজরুল সরকারি কলেজের আরেকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাত কলেজে ইতোমধ্যে নতুন করে পাস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো বন্ধ রয়েছে। এখন শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারলেই বাঁচি। তবে চরম হতাশার মধ্যে আছি। কারণ আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা একসঙ্গেই ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা আমাদের অনেক আগেই ডিগ্রী শেষ করে বের হয়ে গেছেন। অথচ আমরা এক বছর পর পরীক্ষা দিতে এসেও তাদের চেয়ে ১ ঘণ্টা কম সময় পাচ্ছি। আমাদের সাথে কেন এই বৈষম্য?
তিনি আরও বলেন, খাতা মূল্যায়নেও আমরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমাদের আগের অর্থাৎ ২০১৩-১৪ সেশনের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল কয়েকদিন আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, পাসের হার মাত্র ১৮ থেকে ২২ ভাগ। এবার আমাদের পরীক্ষায়ও সময় কম দেয়া হল। সেজন্য অনেকেই ঠিকমত উত্তর লিখতে পারেনি। আমাদের নিয়ে কেন এমনটা করা হচ্ছে?
এ বিষয়ে সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (ফোকাল পয়েন্ট) ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বিডি২৪লাইভকে বলেন, এসব শিক্ষার্থীর জন্য নতুন কোনো সিলেবাস তৈরি করা হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ীই তাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ইংরেজি পরীক্ষায় কেন সময় কম দেয়া হল সে বিষয়ে আমি অবগত নই। প্রশ্ন প্রণয়নের দায়িত্বে থাকে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট। তারা বিষয়টি বলতে পারবে। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য কি করা যায় অবশ্যই আমি তা করার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। সুস্থ হওয়ার পর আমার ওপর এত চাপ যাচ্ছে যে সব বিষয়ে খোঁজ রাখাও সম্ভব হয় না। তবে শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার কথা আমাকে জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে তাদের এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ডিগ্রীর শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছিয়ে গেছে। আর যেন তাদের সময় অপচয় না হয় সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।